বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে ক্রিকেট যতটা আলো ছড়ায়, অলিম্পিক গেমস ঠিক ততটাই দূরের এক স্বপ্নের মতো। প্রতি চার বছর অন্তর আয়োজিত এই বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেও এখনও পর্যন্ত কোনো পদক জিততে পারেনি বাংলাদেশ। তবে সম্ভাবনার আলো কি একেবারে নিভে গেছে? নাকি ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে কোনো আশার দিকেই?
বর্তমান চিত্র
বাংলাদেশ অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করছে ১৯৮৪ সাল থেকে। এখন পর্যন্ত কোনো ক্রীড়াবিদ সরাসরি অলিম্পিকের মূল প্রতিযোগিতায় কোয়ালিফাই করতে পারেননি। মূলত ‘wild card’ বা বিশেষ আমন্ত্রণের মাধ্যমে আমাদের ক্রীড়াবিদরা অলিম্পিকে সুযোগ পান। এটি অবশ্য নতুন খেলোয়াড়দের আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়তা করে, তবে প্রতিযোগিতামূলকভাবে পদকের সম্ভাবনা তৈরি করে না।
কোন খেলায় সম্ভাবনা বেশি?
বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনার জায়গা হতে পারে আর্চারি। বিশেষ করে রোমান সানা — যিনি ২০১৯ সালে বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পদক জিতে গোটা বিশ্বে বাংলাদেশের নাম তুলে ধরেন। তিনি ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে সরাসরি কোয়ালিফাই করা প্রথম বাংলাদেশি ক্রীড়াবিদ হিসেবে ইতিহাস গড়েন। যদিও সেখানেও তিনি কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছেও হেরে যান, তবু তার পারফরম্যান্স দেখিয়েছে যে সঠিক প্রস্তুতি ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাংলাদেশ অলিম্পিকে পদকের পথে হাঁটতে পারে।
কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশে ক্রীড়াবিদ গড়ার কাঠামো এখনও দুর্বল। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, আন্তর্জাতিক মানের কোচ, এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাবে খেলোয়াড়দের প্রতিভা মাঠেই ঝরে যায়। এছাড়া অলিম্পিক স্পোর্টসে তেমন সরকারি বা বেসরকারি বিনিয়োগও দেখা যায় না, যা অন্য অনেক দেশ অলিম্পিকের আগে বড় অঙ্কে করে থাকে।
ভবিষ্যতের রূপরেখা
বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (BOA) ও কিছু স্পোর্টস ফেডারেশন অলিম্পিক-ভিত্তিক ডিসিপ্লিনে গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করছে। উদাহরণস্বরূপ, শ্যুটিং, সাঁতার ও ওজন উত্তোলনেও কিছু প্রতিভা তৈরি হচ্ছে। যদি এই খেলাগুলোতে সুনির্দিষ্টভাবে পরিকল্পনা নেওয়া হয়, তবে আগামী ৮-১২ বছরে আমরা পদকের জন্য লড়াই করার অবস্থানে যেতে পারি।