বর্তমান ডিজিটাল যুগে ইন্টারনেট আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। ব্যাঙ্কিং, কেনাকাটা, শিক্ষালাভ থেকে শুরু করে যোগাযোগ—সবকিছুই এখন অনলাইন নির্ভর। কিন্তু এই সুবিধার সাথেই বেড়ে যাচ্ছে এক ভয়ঙ্কর হুমকি: ইন্টারনেট জালিয়াতি বা সাইবার অপরাধ। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও কেউ না কেউ এই অপরাধের শিকার হচ্ছেন। প্রশ্ন হলো—সাইবার অপরাধীরা আসলে কাদের টার্গেট করছে?
কীভাবে ঘটে ইন্টারনেট জালিয়াতি?
সাইবার অপরাধীরা সাধারণত বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয়।
- ফিশিং ইমেইল বা ম্যাসেজ পাঠিয়ে
- ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে
- ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার ইনস্টল করিয়ে
- সোশ্যাল মিডিয়াতে ফাঁদ পেতে
তারা ব্যবহারকারীর তথ্য চুরি করে যেমন: ব্যাংক একাউন্ট, এনআইডি, পাসওয়ার্ড, এবং ওটিপি।
টার্গেটে কারা?
সাইবার অপরাধীরা সাধারণত যাদের তথ্য সচেতনতা কম, তাদের টার্গেট করে। বিশেষভাবে—
১. বয়সভিত্তিক দুর্বলতা
- বয়স্ক নাগরিকরা অনেক সময় প্রযুক্তি বিষয়ে কম জানেন, ফলে সহজেই প্রতারণার শিকার হন।
- তরুণরাও, বিশেষ করে যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি সময় কাটায়, অনেক সময় অসতর্ক হয়।
২. ছাত্রছাত্রী ও চাকরিপ্রার্থীরা
ভুয়া স্কলারশিপ, চাকরির অফার বা অনলাইন কোর্সের লোভ দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে অর্থ ও তথ্য হাতিয়ে নেয়া হয়।
৩. অনলাইন শপিং ব্যবহারকারী
ফেক ই-কমার্স সাইট বা অফারের নামে গ্রাহকদের প্রতারিত করে অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়।
৪. ব্যবসায়ী ও ফ্রিল্যান্সাররা
অনলাইন পেমেন্ট, ব্যাংকিং এবং ক্লায়েন্ট ডিলিংয়ের সময় নিরাপত্তা দুর্বলতা কাজে লাগানো হয়।
সবচেয়ে সাধারণ প্রতারণার ধরন
- ফেসবুক হ্যাক করে টাকা চাওয়া
- বিকাশ বা নগদ থেকে ফোন করে ওটিপি নেওয়া
- ভুয়া চাকরির অফার দিয়ে অগ্রিম টাকা দাবি
- প্রেমের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া
- বিদেশ থেকে গিফট আসছে—এই ছুতোয় কাস্টম ফি চাওয়া
কীভাবে বাঁচবেন?
১. অচেনা লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন।
২. ব্যক্তিগত তথ্য কাউকে দিবেন না—even পরিচিত হলেও নিশ্চিত না হয়ে নয়।
৩. দুই স্তরের নিরাপত্তা (2FA) চালু করুন।
4. সার্টিফায়েড ওয়েবসাইট ছাড়া কোথাও কেনাকাটা বা লগইন করবেন না।
5. সন্দেহজনক কিছু দেখলেই সাইবার ক্রাইম ইউনিটে অভিযোগ জানান।
উপসংহার
ইন্টারনেট যেমন আমাদের জীবনকে সহজ করেছে, তেমনি অপরাধীদের জন্যও এটি একটি খোলা মঞ্চ হয়ে উঠেছে। সচেতনতা ও প্রযুক্তিগত নিরাপত্তাই আমাদের একমাত্র ঢাল। মনে রাখতে হবে, “সতর্কতাই সাইবার প্রতারণা থেকে বাঁচার প্রথম ও প্রধান অস্ত্র।”