প্রতি বছরের মতো এবারও বিশ্বের নেতৃস্থানীয় দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় একত্রিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন ২০২৫-এ। এ বছর সম্মেলনের আয়োজক দেশ ছিল নেদারল্যান্ডস, যেখানে ১৯০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এই সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল:
“একসাথে সবুজ ভবিষ্যতের পথে”
এই সম্মেলনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, প্রতিশ্রুতি ও কৌশলগত পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে, যার প্রভাব পড়বে আগামী দশকের জলবায়ু নীতিমালায়।
🔹 যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার:
যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা:
- ২০৩৫ সালের মধ্যে কার্বন-নিরপেক্ষ বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাবে।
- দুই ট্রিলিয়ন ডলার জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামোয় বিনিয়োগ করবে।
- উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ৩০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে জলবায়ু অভিযোজন প্রকল্পে।
“জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ—আমরা একসাথে এর মোকাবিলা করব।”
— যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট (ডেমো কোটেশন)
🔹 চীনের প্রতিশ্রুতি:
চীন, বিশ্বের সর্ববৃহৎ কার্বন নিঃসরণকারী দেশ হিসেবে বেশ কিছু সাহসী প্রতিশ্রুতি দিয়েছে:
- ২০৪০ সালের মধ্যে নেট-জিরো কার্বন লক্ষ্য।
- কয়লা-নির্ভরতা ৫০% থেকে ২৫%-এ নামিয়ে আনা।
- ১০০টি নতুন সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন।
🔹 ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিকল্পনা:
ইইউ ঘোষণা করেছে:
- গ্রিন ট্যাক্স আরোপ করা হবে কার্বন নিঃসরণ বেশি করে এমন শিল্পে।
- ২০৩০ সালের মধ্যে মোট নিঃসরণ ৫৫% কমানো হবে ১৯৯০ সালের তুলনায়।
- স্কুল পর্যায় থেকে জলবায়ু শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হবে।

🔹 ভারতের অবস্থান:
ভারত বলেছে:
- ২০৩৫ সালের মধ্যে ৭০% বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আসবে।
- ২০৩০-এর মধ্যে ১০০ কোটি গাছ লাগানোর কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
- কার্বন নিঃসরণ কমাতে ইলেকট্রিক যানবাহনের ব্যবহার বৃদ্ধি।
🔹 বাংলাদেশের ভূমিকা:
বাংলাদেশ এই সম্মেলনে উদাহরণ স্থাপন করেছে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে:
- জলবায়ু অভিযোজন তহবিল গঠনে নেতৃত্ব দিয়েছে।
- উপকূলীয় অঞ্চলে ১০ লাখ মানুষের জন্য ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ঘর নির্মাণের প্রতিশ্রুতি।
- জলবায়ু গবেষণায় আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করার প্রস্তাব।
“আমরা ক্ষুদ্র দেশ, কিন্তু আমাদের অবস্থান দৃঢ়—জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা অগ্রণী।”
— মাননীয় প্রধানমন্ত্রী (ডেমো উক্তি)
🔹 আফ্রিকার সম্মিলিত অবস্থান:
আফ্রিকার দেশগুলো সম্মিলিতভাবে দাবি করেছে:
- উন্নত দেশগুলোকে তাদের ঐতিহাসিক নিঃসরণের দায় নিতে হবে।
- ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে জলবায়ু ক্ষতিপূরণ তহবিল কার্যকর করতে হবে।
🔹 উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্তসমূহ:
- Loss & Damage Fund চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে — জলবায়ু দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো অর্থ পাবে।
- নতুন ‘Green Climate Investment Bank’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা।
- প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে বিশ্বব্যাপী চুক্তি বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ: ২০৩২ সালের মধ্যে প্লাস্টিক উৎপাদন অর্ধেকে নামানো।
🔚 উপসংহার
জলবায়ু সম্মেলন ২০২৫ ছিল নতুন যুগের সূচনা। বিশ্বের দেশগুলো এবার আগের চেয়ে বেশি সচেতন ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ থাকলে এবং পরস্পরের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে, এই অঙ্গীকারগুলো আমাদের পৃথিবীকে রক্ষা করতে ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য এটি শুধুমাত্র টিকে থাকার লড়াই নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তোলার লক্ষ্যে এক বড় পদক্ষেপ।