সম্প্রতি রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় জাল নোট চক্র নিয়ে র্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযানে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে একদল প্রতারক দীর্ঘদিন ধরে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে বিপদে ফেলছিল। প্রশ্ন এখন—এই চক্রের পেছনে রয়েছে কারা?
অভিযান ও গ্রেপ্তার
র্যাবের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে নারায়ণগঞ্জ ও মিরপুরে অভিযান চালিয়ে প্রায় ২৫ লাখ টাকার জাল নোট এবং প্রিন্টিং মেশিন, হাই-রেজুলুশন স্ক্যানার, ও কাগজ উদ্ধার করা হয়। আটক হয় ৬ জন। এদের মধ্যে দুজন নকল নোট তৈরির বিশেষজ্ঞ, বাকিরা সরবরাহ ও বিতরণ কাজে নিয়োজিত।
চক্রের ভেতরের গেমপ্ল্যান
তদন্তে জানা গেছে:
- চক্রটি ভাড়া করা বাসা ও দোকানে মিনি প্রেস বসিয়ে কাজ করত।
- নতুন নোট ছাপার কৌশল এবং বাস্তব ঘ্রাণের মতো সুগন্ধির ব্যবহারও করা হতো যেন সাধারণ মানুষ ধরা না পড়ে।
- তারা নোট সরবরাহ করত বাজারে, ঈদ বা মেলার সময়, এমনকি সীমান্তবর্তী জেলাতেও।
মূল হোতার পরিচয় কী?
যদিও এখনো মূল হোতাকে ধরতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, তবে সূত্র বলছে:
- চক্রটির নেতৃত্বে একজন সাবেক গ্রাফিক ডিজাইনার ও একজন প্রিন্টিং প্রেস মালিক।
- এদের রয়েছে রাজনৈতিক পরিচয় এবং দীর্ঘদিন ধরে গোপনে এই চক্র চালিয়ে আসছে।
- চক্রের সঙ্গে কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত দোকানদার ও অর্থ লেনদেনকারীও যুক্ত, যারা জাল নোট চালাতে সহায়তা করে।
কারা সবচেয়ে বেশি শিকার?
১. লোকাল মার্কেটের খুচরা বিক্রেতারা, যারা তাড়াহুড়ায় নোট যাচাই করতে পারেন না।
২. অশিক্ষিত ও বয়স্ক নাগরিকরা, যারা নোটের সূক্ষ্ম পার্থক্য ধরতে অক্ষম।
3. মেলার সময় দোকানিরা, যারা অস্থায়ী দোকান খুলে ব্যবসা করেন এবং যাচাইয়ের সুযোগ কম পান।
সচেতনতার অভাবেই বাড়ছে বিপদ
জাতীয় ও সিকিউরিটি ফিচার সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। যেমন:
- নোটে জলছাপ, নিরাপত্তা সুতা, মাইক্রো টেক্সট—এসব খেয়াল করলেই জাল-আসল পার্থক্য করা যায়।
- অনেকে আবার বিশ্বাস করে নোট আসল কিনা, শুধুমাত্র কাগজের গন্ধ বা রঙ দেখেই বুঝা সম্ভব।
কীভাবে নিজেকে রক্ষা করবেন?
✔ বড় অঙ্কের লেনদেনে নোট যাচাই মেশিন ব্যবহার করুন।
✔ সন্দেহ হলে দ্রুত পুলিশকে জানান।
✔ বাজারে কেনাকাটায় খুচরা নোট বেশি ব্যবহার করুন।
✔ ব্যাংক থেকে নোট গ্রহণের সময় লক্ষ রাখুন—ছেঁড়া বা অসম্পূর্ণ নোট গ্রহণ না করাই ভালো।
উপসংহার
জাল নোট শুধু ব্যক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না, পুরো অর্থনীতি ও ব্যাংকিং ব্যবস্থাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই জালিয়াতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরিই পারে এই চক্রকে রুখে দিতে।
“একটা জাল নোট মানে বিশ্বাসের মৃত্যু।”