বাংলাদেশে মাদকের করাল ছায়া নতুন কিছু নয়, তবে সময়ের সঙ্গে বদলাচ্ছে এর বিস্তার ও রুট। সাম্প্রতিক তথ্যে উঠে এসেছে এক ভয়াবহ বাস্তবতা—সীমান্ত পেরিয়ে শহরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে মাদকের নতুন সাপ্লাই চেইন, যা শুধু যুবসমাজকেই নয়, দেশের নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ফেলছে।
নতুন রুট, পুরনো লক্ষ্য
মাদক পাচারকারীরা আগে যেসব সীমান্ত ব্যবহার করত (টেকনাফ, বান্দরবন, সাতক্ষীরা), এখন সেগুলোর পাশাপাশি নতুন এলাকাকেও রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। যেমন:
- নদীপথ ব্যবহার করে গোপনে মাদক ঢোকানো
- ছোট শহর ও গ্রামকে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার
- অনলাইন মাধ্যমে মাদক কেনাবেচা
কাদের দিয়ে ছড়ানো হচ্ছে শহরে?
মাদকচক্র শহরে তাদের ব্যবসা বিস্তারে নতুন কৌশল নিচ্ছে:
- স্কুল-কলেজ পড়ুয়া কিশোরদের ‘ক্যারিার’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
- অনলাইন ফুড ডেলিভারি বা কুরিয়ার সার্ভিসের ছদ্মাবরণে পাচার হচ্ছে ইয়াবা, গাঁজা, আইস।
- বেকার তরুণ ও পথশিশুদের মোটা অঙ্কের টাকার লোভ দেখিয়ে কাজে লাগানো হচ্ছে।
সবচেয়ে বেশি ছড়াচ্ছে যেসব মাদক
বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়ছে:
- ইয়াবা (সীমান্ত এলাকা থেকে আসা)
- আইস (ক্রিস্টাল মেথ) – উচ্চবিত্ত তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়
- গাঁজা ও হেরোইন – স্থানীয়ভাবে উৎপাদন ও পাচার দুটোই চলছে
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চ্যালেঞ্জ
মাদক চক্রগুলোর আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, অর্থ এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তাদের ধরাটা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে।
তবে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি একাধিক অভিযানে কয়েকটি বড় চক্রকে ধরতে সক্ষম হয়েছে।
তারপরও নতুন নতুন রুট ও মুখ বদলে আবার সক্রিয় হয়ে উঠছে অপরাধীরা।
সমাজের দায়িত্ব
শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে এই ভয়াবহ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন—
- পরিবারের সচেতনতা
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী শিক্ষা
- মহল্লা বা ওয়ার্ডভিত্তিক নজরদারি
- মাদকসেবীদের পুনর্বাসন প্রোগ্রাম
উপসংহার
মাদক এখন আর শুধু সীমান্তে আটকে নেই—এটি আমাদের শহরের অলিগলিতে, কলেজ ক্যাম্পাসে, এমনকি আমাদের ঘরের পাশে ছড়িয়ে পড়ছে। এই ভয়াবহ বাস্তবতা থেকে মুক্তির জন্য দরকার সম্মিলিত প্রতিরোধ, সচেতনতা ও কঠোর আইন প্রয়োগ।
“আজ যে মাদক অন্য কারও সন্তানকে ধ্বংস করছে, কাল সেটি আপনার ঘরে আসতে পারে।”